ব্রণ ত্বকের একটি পরিচিত চিকিৎসাযোগ্য অসুখ। সাধারণত মুখমণ্ডলে ব্রণ হলেও বুকের উপরের অংশ, পিঠ, ঘাড়ে ব্রণ হতে পারে। ব্রণের সংক্রমণ হলে দীর্ঘস্থায়ী দাগ হয়। ব্রণের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং দাগ দূর করতে দ্রুত এবং দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন। বয়ঃসন্ধিকালে মূলত ব্রণ হয়। ১২-২৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা ব্রণে আক্রান্ত হয়। প্রতি ১০ জনে ৮ জন মানুষে প্রাথমিক থেকে তীব্র কোন না কোন মাত্রার ব্রণ দেখা যায়। একবার ব্রণে আক্রান্ত হলে বেশ কয়েক বছর স্থায়ী হয়। ত্বকের সতেজতা এবং কমনীয়তা রক্ষা করে সেবাসিয়াস গ্রন্থি। সূক্ষ্ণ রোমকূপের মাধ্যমে ত্বকের নিচে অবস্থিত এসব গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তৈলাক্ত পদার্থ(সেবাম) ত্বকের উপরে আসে। যাদের ত্বক অপেক্ষাকৃত তেলতেলে তাদের ব্রণ হবার প্রবণতা দেখা যায়। জেনেটিক কারণে ব্যক্তিভেদে সেবাসিয়াস গ্রন্থির নিঃসরণ কম বেশি হতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের প্রভাবে তৈলাক্ত পদার্থের(সেবাম) পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ধুলো-ময়লা, ত্বকের মৃত কোষ এবং অতিরিক্ত সেবাম জমে রোমকূপ বন্ধ করে ফেলে। জমে থাকা সেবামে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের ফলে সেবাসিয়াস গ্রন্থি ফেটে ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

# প্রাথমিক পর্যায়ে দু’ধরনের ফুসকুঁড়ি (কমেডন) দেখা যায়ঃ
ব্ল্যাকহেডঃ কালো ফোঁটার মত মুখ থাকে যার চারপাশে চাপ দিলে ভেতর থেকে তৈলাক্ত পদার্থ বের হবে।
হোয়াইটহেডঃ সাদাটে ছোট দানার মত, কোন মুখ নেই, চাপ দিলে কোন কিছু বের হবে না। হোয়াইটহেডে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে ব্রণ ও ত্বকের জটিলতা যেমনঃ পুঁজ জমে ফোঁড়া হওয়া, গভীর ক্ষত এবং দীর্ঘস্থায়ী দাগ হয়।
# ব্রণের বাড়ে যেসব ক্ষেত্রেঃ
মহিলাদের মাসিকের সময়, অসুখঃ কুশিং সিন্ড্রোম, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম, নির্দিষ্ট কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, ভারি মেকআপ, ব্রণ নখ দিয়ে খোঁটা, গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় অতিরিক্ত ঘাম,মেডিসিনের ব্যাবহার (স্টেরয়েড ক্রিম, ফেনিটয়েন ইত্যাদি)।
# ব্রণ সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণাঃ
অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন ব্রণের জন্য দায়ী। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপে ব্রণ বৃদ্ধি পায়, ব্রণ ছোঁয়াচে,পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে ব্রণ হয় না, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, চিনি/শর্করা সমৃদ্ধ খাবারে ব্রণ হয়। চিকিৎসায় ব্রণ সম্পূর্ণ ভালো হয় না।
# ব্রণে ত্বকের যত্নঃ
বার বার পরিষ্কার না করা, দৈনিক অন্তত দু’বার পরিষ্কার করা। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার না করা, ঘষে ঘষে পরিষ্কার না করা, আঙ্গুল বা নরম কাপড় ব্যবহার, পরিষ্কারে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা, অয়েনমেন্ট ব্যবহার না করা(তৈলাক্ত পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে, ক্রিমে পানির পারিমাণ বেশি)
# চিকিৎসার উদ্দেশ্য এবং বিকল্পগুলোঃ
– ব্রণের ধরন ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি এবং স্থায়ীত্ব। প্রাথমিক থেকে তীব্র মাত্রার ব্রণে এক বা একাধিক ক্রিম/লোশন, একাধিক উপাদানের সংমিশ্রণের ক্রিম/লোশন, ক্রিম/লোশনের সাথে ট্যাবলেট/ক্যাপসুল ব্যবহৃত হয়।
– ক্রিম/লোশনের কাজ- বন্ধ রোমকূপ পরিষ্কার করা, ত্বকের প্রদাহ কমানো, এন্টিবায়োটিক, দাগ দূর করা।
– ট্যাবলেট/ক্যাপসুলের কাজ-মূলত এন্টিবায়োটিক বা সংক্রমণের চিকিৎসা, এছাড়া আইসোট্রেটিনইন ত্বকের তেলতেলে ভাব কমায়। ব্রণের সম্পূর্ণ চিকিৎসার পরেও একটা দুটো দাগ/ক্ষত থেকে যেতে পারে, এমন কোন চিকিৎসা নেই যা ত্বককে আগের মত মসৃণ করবে।
– ব্রণের চিকিৎসায় সুফল পেতে নূন্যতম ৪-৬ সপ্তাহ নিয়মিত চিকিৎসকের উপদেশমত ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। তীব্রতা অনুযায়ী সম্পূর্ণ সুস্থ এবং দাগমুক্ত হতে ৪ মাসের বেশিও লাগতে পারে। ব্রণের চিকিৎসায় ব্যর্থতার অন্যতম কারণ-আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসায় কাজ হচ্ছে না মনে করে ৪/৬ সপ্তাহের আগেই চিকিৎসা বন্ধ করে দেন/অনিয়মিত হয়ে পরেন। ৪-৬ সপ্তাহের পরেও চিকিৎসায় ব্রণের কোন উন্নতি না হলে নতুন এবং উচ্চমাত্রার – ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে শুরু করতে হবে, যা সাধারণত কার্যকর।
– ব্রণের দাগ দূর হয়ে যাবার পর চিকিৎসা থামানোর পর অনেক সময় ব্রণ আবার ফিরে আসতে পারে। সীমিতভাবে স্বল্পমাত্রার ব্রণের চিকিৎসা অন্তত ৪-৫ বছর চালিয়ে যেতে হবে।
# ব্রণের চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহারে যে সব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবেঃ
বেনজয়িল পারঅক্সাইড, রেটিনয়েডস (এডাপালিন,ট্রেটিনয়িন) ক্রিম/লোশন সূর্যালোকে ত্বকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া (জ্বালাপোড়া) করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে রাতে ব্যবহার করে সকালে ধুয়ে ফেলা বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে। রেটিনয়েডস (এডাপালিন,ট্রেটিনয়িন) ক্রিম/লোশন, আইসোট্রেটিনয়িন ক্যাপসুল গর্ভাবস্থায় ব্যবহারে গর্ভস্থ শিশু বিকলাঙ্গ ও জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন অবস্থাতেই এই জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।
-