সঠিক পুষ্টির পরামর্শ গর্ভবতীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। গর্ভকালীন পুষ্টির চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করলে গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়। ফলিক অ্যাসিড একটি পুষ্টি উপাদান। গর্ভস্থ শিশুর সঠিক শারীরিক গঠনের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। গর্ভকালীন ১ম ট্রাইমেস্টারে এর অভাব হলে শিশুর নিউরাল টিউব তৈরিতে বিঘ সৃষ্টি হয় যা Spina Bifida নামের জন্মত্র“টির কারণ। গর্ভধারণের আগে ৪ সপ্তাহ থেকেই ফলিক অ্যাসিডের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে হয়। যারা গর্ভধারণ-পূর্ব পরামর্শের জন্য চিকিৎসকের কাছে আসেন, তারা অতি সহজেই এই পরামর্শ পেতে পারেন।

কৃমি সংক্রমণ অপুষ্টির একটি প্রধান কারণ। এ পরজীবীটি মায়ের পুষ্টির ওপর ভাগ বসায় এবং রক্তস্বল্পতাসহ সার্বিক পুষ্টির ব্যাঘাত ঘটায়। কৃমির ওষুধ সেবন গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে। তাই গর্ভকালীন সময়ে কৃমির ওষুধ খাওয়া নিষেধ। যারা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের গর্ভধারণের আগেই কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়া উচিত।
রক্তের গ্র“প: রক্তের গ্র“প মানুষের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। নিজের রক্তের গ্র“প জানা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। নানা কারণে রক্তের গ্র“প জানার প্রয়োজন হয়। সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করলে নিজের এবং স্বামীর দুজনেরই রক্তের গ্র“প জানা প্রয়োজন। মায়ের রক্তের গ্র“পের Rh Factor যদি নেগেটিভ এবং বাবার রক্তের গ্র“প পজিটিভ হয়, তবে গর্ভস্থ শিশুর রক্তের গ্র“প পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রথম সন্তানের পরবর্তী সন্তানের মারত্মক ধরনের জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় সন্তান গর্ভে মারাও যেতে পারে। তাই রক্তের গ্র“প আগে থেকেই জানা থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করা যায়। তাছাড়া গর্ভকালীন বা প্রসবের সময় রক্তক্ষরণ-জনিত যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হয়।
রক্তস্বল্পতা: রক্তস্বল্পতা আমাদের দেশে খুবই সাধারণ সমস্যা। যে কারণে মেয়েরা রক্তস্বল্পতায় ভোগে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—খাবারে লৌহের ঘাটতি, ঋতুস্রাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পাইলস এবং কৃমি সংক্রমণ। গর্ভকালে লৌহের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে চাহিদা অনুযায়ী লৌহের সরবরাহ না হলে রক্তস্বল্পতা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। যা থেকে মায়ের জীবন পর্যন্ত সংশয় হতে পারে এবং এটি গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গর্ভধারণের আগে রক্তস্বল্পতা নির্ণীত হলে তা থেকে উত্তরণের পরামর্শ পেতে পারেন Prenatal Counseling এ আসা রোগীরা।
গর্ভধারণ জনিত ভয়ঃ প্রথমবারের মতো যারা মা হতে যাচ্ছেন, তাদের মনে গর্ভধারণ ও গর্ভকাল সম্পর্কে নানা ধরনের ভীতি কাজ করে। প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই অহেতুক শঙ্কার মধ্যে থাকেন। Prenatal Counseling ধরনের ভীতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। তাছাড়া হবু মায়ের কোনও জিজ্ঞাস্য থাকলেও তার উত্তর পেতে পারেন।
কোন ধরনের অসুস্থতাঃ গর্ভধারণের আগে থেকেই অনেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মৃগী বা খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত থাকতে পারেন। এসব রোগে দীর্ঘ মেয়াদি ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয়। এসব ওষুধের মধ্যে বেশ কিছু ওষুধ আছে যা গর্ভকালীন সময়ে নিরাপদ বলে বিবেচিত হয় না। তাই গর্ভধারণের আগেই চিকিৎসকরা এসব ওষুধ পরিবর্তন করে নিরাপদ ওষুধ গ্রহণের পরামর্শ দেন। ডায়াবেটিসের মুখে খাওয়ার ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই গর্ভকালীন সময়ে মুখে খাবার ওষুধ পরিবর্তন করে ইনসুলিন দেয়া হয়। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রেও যেসব ওষুধ গর্ভকালে নিরাপদ সে ওষুধ দেয়া হয়। কোনও ধরনের যৌন-বাহিত সংক্রামক রোগ থাকলে আগেই তা চিকিৎসা করা উচিত।
টিকাঃ মা টিটেনাস, রুবেলার টিকা নিলে তা নবজাতককে টিটেনাস থেকে রক্ষা করে ও গর্ভাবস্থায় মাকে রুবেলার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। গর্ভাবস্থায় রুবেলা হলে গর্ভস্থ শিশুর ওপর তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থায় কোনও জটিলতাঃ জটিলতা-বিহীন গর্ভকাল ও নিরাপদ প্রসব সবারই কাম্য। তবু অনেক সময় কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যায়। গর্ভপাত, গর্ভকালীন রক্তপাত, গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু ইত্যাদির মতো জটিলতার ইতিহাস যদি পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থায় থেকে থাকে, তবে তাদের বিশেষ সাবধানতামূলক পরামর্শ চিকিৎসকরা দিয়ে থাকেন।
মায়ের কোনও ধরনের আসক্তিঃ পানের সাথে জর্দা, তামাক পাতা, ধূমপান, অ্যালকোহল বা অন্য কোনও ধরনের আসক্তি গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর। তাই এসব আসক্তি ও এর ক্ষতিকর দিকগুলো খোলাখুলি আলোচনা করার সুযোগ থাকে।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর মানসিকতা ও প্রস্তুতিঃ জন্মের পর শিশুর প্রথম খাবার হলও মায়ের বুকের দুধ। ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই হলও শিশুর খাবার। তারপর পরিপূরক খাবারের পাশাপাশি ২ বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। শিশুকে সফলভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা এবং এ সম্পর্কিত কোনও জিজ্ঞাস্য থাকলে তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেয়ার সুযোগ থাকে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক মুল্যবান,তাই মুল্যবান মতামত আমাদের কে জানান