ব্রেস্টফিডিং গাইড
ব্রেস্টফিডিং বেসিকস
কিভাবে ব্রেস্টফিডিং শুরু করবেন
ব্রেস্টফিডিং শুরু করার সবচেয়ে সুন্দর মূহুর্ত হতে পারে যখন প্রথমবারের মত আপনি আপনার বাচ্চাকে কোলে তুলে নিলেন।শুরুতে খুব অল্প পরিমাণে বুকের দুধ তৈরী হয়। একে বলা হয় শাল দুধ যা শিশুকে সংক্রমন থেকে রক্ষা করে।বাচ্চার পুরো শরীরকে আপনার দিকে ঘুরিয়ে নিন এবং বাচ্চাকে বুকের কাছে নিন।ব্রেস্ট নিপলে বাচ্চার ঠোঁটে ছোয়ান এবং যখন মুখ খুলবে তখন নিপল মুখে ঢুকিয়ে দিন ও চেপে ধরুন।
যদি বাচ্চা মুখ না খোলে বা নিপল মুখে না রাখতে পারে তাহলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।ব্রেস্টফিডিং করতে প্রচুর্ ধৈয্য ও অনুশীলন করতে হয়।যদি আপনি হাসপাতালে থাকেন তাহলে এই ব্যাপারে নার্সের সাহায্য নিতে পারেন।
যদি শিশু প্রিম্যাচিউর হয় তাহলে শিশু নিজে বুকের দুধ খেতে পারবে না। এক্ষেত্রে পাম্প করে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
দিনে কতবার ব্রেস্টফিডিং করাবেন
যত বেশি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন তত বেশি দুধ তৈরী হবে।দিনে ৮-১২ বার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।শিশুকে অবশ্যই ৪ ঘন্টা পরপর বুকের দুধ খাওয়ান।যদি ঘুমিয়ে থাকে আস্তে আস্তে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাওয়াতে হবে।অনেক সময় বুকের দুধ খাওয়ার সময় বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠলে আবার খাওয়ান।
ব্রেস্টফিডিং এর সময় মায়ের খাবার
সুষম ও পুস্টিকর খাবার মায়ের বুকের দুধ তৈরীতে সাহায্য করে। অনেকই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ডায়েটিং করেন যার ফলে শিশু বুকের দুধ পায় না এবং অপুস্টিতে ভুগতে পারে। এক্ষেত্রে অল্প অল্প করে বারবার খান কিন্তু খুব বেশি অতিরিক্ত খাবেন না।ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল বর্জন করুন।
শিশুর জন্য সুফল
- ★ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুস্টি ও শক্তি বুকের দুধ থেকে পাওয়া যায়।এতে করে শিশুর শরীরিক ও মানসিক বিকাশ সর্বোচ্চ পরিমাণে হয়।
- ★বুকের দুধ সহজে হজম হয় ও অ্যালার্জি মুক্ত।
- ★ছয় মাস বয়সের নিচে বুকের দুধ্ই একমাত্র নিরাপদ।বুকের দুধে প্রচুর পানি থাকে তাই আলাদা করে পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই।
- ★মস্তিস্কের গঠন ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।
- ★মায়ের সাথে বন্ধন আরো দৃঢ় হয়।
মায়ের জন্য সুফল:
- *ব্রেস্টফিডিং প্রসবের পর মায়ের রক্তক্ষরনের পরিমান কমিয়ে দেয়।
- *শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে জন্মনিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় না।
- *শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে স্তন, জরায়ু, ডিম্বাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
- *শেষ বয়সে অস্টিওপোরেসিস (হাড়ের ক্ষয়রোগ) হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
- *ব্রেস্টফিডিং এর জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয় তাই অতিরিক্ত ওজন ব্রেস্টফিডিং করলে কমে যায়।
কিভাবে বুকের দুধ পাম্প করবেন?
হাতের সাহা্য্যে বুকের দুধ পাম্প করা যায়। প্রথমে মাকে ব্রেস্টের নিপলের উপরের অংশে বৃদ্ধাঙ্গুল এবং বাকি চারটি আঙ্গুল নিচের অংশে রাখতে হবে।এরপর আস্তে আস্তে চাপ প্রয়োগ করুন ও ছাড়ুন।বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী দিয়ে চাপ প্রয়োগ করুন।নিপলের উপরের অংশে ও নিচের অংশে চাপ প্রয়োগ করুন।নিপলে চাপ প্রয়োগ করবেন না।নিপলের চারপাশের অংশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চাপ প্রয়োগ করুন।প্রথমে হয়ত বুকের দুধ নাও আসতে পারে কিন্তু ধীরে ধীরে আসবে। পরিস্কার পাত্রে সংরক্ষন করুন।
বুকের দুধ শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে হাত ধুয়ে নিন এবং একবসায় শিশু যতটুকু খেতে পারবে ততটুকু অন্য একটি পাত্রে ঢেলে আস্তে আস্তে খাওয়ান। বুকের দুধ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৬-৮ ঘন্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।রেফ্রিজারেটরে (৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায়) রেখে ২-৩ দিন সংরক্ষণ করা যায় ( এই ক্ষেত্রে খাওয়ানোর পূর্বে পরম পানির পাত্রে রেখে গরম করে নিতে হবে)।
কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ব্রেস্টফিডিং
কিছু কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরী হয় না এই ক্ষেত্রে মাকে সঠিক ভাবে ব্রেস্টফিডিং করাতে হবে।যত বেশী শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন তত বেশী তৈরী হবে।
মায়ের যদি ডায়াবেটিস, পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রম ও ব্রেস্ট বা নিপলের সার্জারি হয়ে থাকে তাহলে বুকের দুধ তৈরীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।মা যদি HIV বা টিবিতে আক্রান্ত হন তাহলে ব্রেস্টফিডিং এর পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।মা ও শিশু উভয়ই যদি চিকেন পক্সে আক্রান্ত হয় তাহলে ব্রেস্টফিডিং করাতে পারবে কিন্তু শুধুমাত্র মা যদি আক্রান্ত হন তাহলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত শিশুর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং পাম্প করে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে।হেপাটাইটিস এ, বি, সি তে আক্রান্ত মা শিশুকে ব্রেস্টফিডিং করাতে পারবে।ব্রেস্টফিডিং এর সময় মা কে অবশ্যই ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে কারণ এগুলো শিশু জন্য ক্ষতিকর।শিশু ও মায়ের আশেপাশে ধূমপান করা উচিত নয়।শিশুর মুখে বা ঠোঁটে জন্মগত ত্রুটির করণে ব্রেস্টফিডিং এ সমস্যা তৈরী হতে পারে।এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পাম্প করে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর যদি গ্যালাক্টোসোমিয়া (এক ধরনের দূর্লভ জীনগত সমস্যা যার ফলে শরীর গ্যালাক্টোসকে গ্লুকোজে রূপান্তর করতে পারে না এর ফলে শক্তি উৎপন্ন হয় না।গ্যালাক্টোস দুধ ও দুধের তৈরী খাবারে পাওয়া যায়)থাকে তাহলে শিশুকে ব্রেস্টফিডিং এর পরিবর্তে ল্যাক্টোসবিহীন দুধ দিতে হবে।অসুস্থ শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
কর্মজীবী ময়েদের ক্ষেত্রে:
যদি কর্মক্ষেত্রে সুব্যবস্থা থাকে তাহলে শিশুকে সাথে নিয়ে যেতে হবে অথবা বুকের দুধ পাম্প করে রেখে যেতে হবে যাতে করে মায়ের পরিবর্তে পরিবারের অন্য সদস্য শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারে।বাসায় আসার পর শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক মুল্যবান,তাই মুল্যবান মতামত আমাদের কে জানান