শিশুর বিকাশ
মাইলস্টোন
এটি একটি গাইডলাইন মাত্র।প্রত্যেকটি শিশুই ভিন্ন এবং সে তার নিজের মত করে বেড়ে ওঠে।শুধু মাত্র বিপদচিহ্ন গুলো দেখলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১ থেকে ৭ মাস
মাইলস্টোনঃ ১ মাস
- এক সপ্তাহের মধ্যে মায়ের আওয়াজ, চেহারা ও স্পর্শ চিনতে শিখবে।
- চলন্ত কিছুর দিকে তাকানো শিখবে।
- মাথা ঘুরিয়ে শব্দের উৎসের দিকে তাকানো চেস্টা করবে।
বাবা-মা এর করণীয়:
- শিশুর সাথে কথা বলুন, কোলে নিন।শিশুর ঘুমানোর ও ক্ষুধার লক্ষনগুলো চিনতে শিখুন।
- বারবার খাবার খাওয়ান।
- খেলনা দিয়ে দৃস্টি আকর্ষন করুন।
বিপদ চিহ্ন:
- খুব আস্তে খাওয়া বা চুষতে না পারা।
- চলন্ত কিছুর দিকে দৃস্টি না দেয়া।
- তীব্র আলো বা শব্দে প্রতিক্রিয়া না দেখানো।
মাইলস্টোনঃ ৩ মাস
- শিশু মুখ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ করার চেস্টা করবে।
- মাথার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে।
- পেটের উপর শুয়ে মাথা তোলার চেস্টা করবে।
- হাতের মুঠি খুলতে ও বন্ধ করতে পারবে।খেলনা নাড়াচাড়া করার চেস্টা করবে।
- আকর্ষনীয় কিছু দেখলে আগ্রহী হয়ে ওঠবে।
বাবা-মা এর করণীয়:
শিশুর যেকোন কিছুতে সাড়া দিন।কথা বলুন, হাসুন,বই পড়ুন, বিভিন্ন পরিচিত জিনিসের নাম বলুন।খেলনা ধরতে সাহায্য করুন।
বিপদ চিহ্ন:
- মাথার ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারে।
- কিছু ধরতে না শিখে।
- তীব্র আলো বা শব্দে প্রতিক্রিয়া না দেখানো।
মাইলস্টোনঃ ৪-৭ মাস
- শিশু হাসবে, কিছু বলার চেস্টা করবে।
- গড়াগড়ি করবে।
- সাহায্য ছাড়া বসতে শিখবে।
- কোন কিছুতে বাধা দিলে বা ‘না’ বললে বুঝতে পারবে।
- নিজের নাম শুনলে যে ডাকবে তার দিকে তাকাবে।
- চারপাশের জিনিস চিনতে শিখবে।
বাবা-মা এর করণীয়:
শিশুর সাথে খেলা করুন, গোসলের সময় হাসানোর চেস্টা করুন।শিশুর কথার বিপরীতে কথা বলুন।রঙিন বই নিয়ে পড়ুন।বিভিন্ন জিনিসের নাম শিখান।শিশুকে খেলার সুযোগ দিন ও ঘর শিশুর জন্য নিরাপদ রাখুন।শিশুর খাওয়া, ঘুম ও খেলা রুটিন মত করানোর চেস্টা করুন।
বিপদ চিহ্ন:
- জড়সড় বা নিস্তেজ থাকা।
- মাথার ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারে।
- না হাসা
- আকর্ষনীয় কিছু দেখলে আগ্রহী না হওয়া।
৮ থেকে ১২ মাস
মাইলস্টোনঃ
- হামাগুড়ি দিবে, নিজে নিজে বসতে শিখবে
- দাঁড়ানোর চেস্টা করবে এবং সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারবে।
- ছোট ছোট শব্দ বলার চেস্টা করবে যেমন দাদা, বাবা, মা ।
- নিজের মতামত দিতে চেস্টা করবে- যেমন কি চায় বা কি চায় না ।
- নিজে নিজে খাবার খাওয়ার চেস্টা করবে।
- বড়দের অনুকরণ করতে শিখবে যেমন: মোবাইলে কথা বলা বা চিরুনি দিয়ে মাথা আচঁড়ানো।
বাবা-মা এর করণীয়:
কথা বলা চালিয়ে যান কারণ এই সময় শিশু কথা বলা শিখবে।যেকোন কিছু নিয়ে কথা বলুন যেমন: কোন একটা কাজের জন্য কি করবেন কিভাবে করবেন। বই পড়ুন, লুকোচুরি খেলুন। ধরে ধরে হাটা শিখানোর চেস্টা করুন।খেলনা দিয়ে খেলতে দিন। ভাল ব্যবহার বা কাজের প্রশংসা করুন এবং অতিরি্ক্ত দুস্টামিতে না করুন।এতে করে বুঝতে শিখবে কোনটা করা উচিত বা কোনটা করা উচিত নয়।
বিপদ চিহ্ন:
- হামাগুড়ি না দেয়া।
- সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে না পারা।
- কথা না বলা।
- কোন কিছুর প্রতি আগ্রহী না হওয়া।
- কোন কিছু মতামত দিতে না পারা যেমন পছন্দ বা অপছন্দ
১৩ থেকে ২৪ মাস
মাইলস্টোনঃ
- নিজে নিজে হাটতে পারবে।
- সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নামতে পারবে।
- বল ছুড়ে দেয়া বা লাথি দেয়া শিখবে।
- সোফা বা চেয়ারে উঠতে পারবে।
- অনেক কিছু বুঝতে শিখবে ও নতুন নতুন শব্দ বলতে পারবে।
- ২৪ মাসে ছোট ছোট বাক্য বলতে পারবে।
- নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে শিখবে যেমন: বইটি উঠাও এবং আমার কাছে নিয়ে আস।
- জিনিসের রং ও আকার সম্পর্কে ধারনা হবে।
- নিজে নিজে সব কিছু করার চেস্টা করবে যেমন: কাপড় পরা, খাওয়া,হাত ধোয়া।
- খেলতে শিখবে যেমন: পুতুলকে খাওয়ানো বা গাড়ী চালানো এবং অন্য শিশুদের সাথে খেলবে।
বাবা-মা এর করণীয়:
- কথা বলুন, প্রশ্ন করুন, শিশুর মতামত নিন ও তার প্রশ্নের জবাব দিন।বর্ণ ও সংখ্যার ধারনা দিন।
- শিশুকে কটু কথা বা তার সামনে খারাপ কিছু বলবেন না।
- বিভিন্ন রংয়ের খেলনা দিন এবং একই রংয়ের বা আকারের খেলনা আলাদা করতে বলুন।
- বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান।
- ভাল কাজের প্রশংসা করুন এবং খারাপ কাজের পরিনতি বুঝিয়ে বলুন।
- ধৈর্য্য ধরুন ও পজিটিভ থাকুন। শিশু মাত্র শেখা শুরু করেছে তাই তাকে শিখতে দিন কিভাবে নিজেকে প্রকাশ করবে ও নিয়ন্ত্রনে রাখবে।
- টয়লেট ট্রেনিং শুরু করতে পারেন।এটি কেউ দেরীতে শিখে আর কেউ আগেই শিখে যায়।
বিপদ চিহ্ন:
- ১৮ মাস বয়স কিন্তু শিশু হাটচ্ছে না।
- কমপক্ষে ছয়টি শব্দ যদি বলতে না পারে।
- অন্যদের দেখে কোন কিছু অনুকরন করতে না শেখে।
- সহজ নির্দেশ যদি বুঝতে না পারে
- আগে যা পারত তা যদি না পারে।
২৫ থেকে ৩৬ মাস:-
মাইলস্টোনঃ
- অনেক কিছু কল্পনা করতে শেখে।
- কথা বলতে শিখে যায়। এমনকি অপরিচিতরাও শিশুর কথা বুঝতে পারে।
- নতুন নতুন শব্দ শেখে।
- বিভিন্ন কাজ করতে শেখে যেমন: সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা নিচে নামা, দরজা খোলা, তিন চাকার সাইকেল চালানো, বৃত্ত আঁকা।
- বন্ধুত্ব করতে শেখে।
- আচরনে ভিন্নতা দেখা যায়: যেমন: কোথাও গিয়ে খেলাধূলা করে আনন্দ করছে আবার পরের মুহূর্তে বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্না করা।
বাবা-মা এর করণীয়:
- সমবয়সী শিশুদের সাথে খেলতে দিন।
- অন্যের সাথে খেলনা বা তার জিনিস শেয়ার করা শিখান।
- লিখতে শেখান ও গুনতে শিখান।
- শরীরের বিভিন্ন অংশের নাম শিখান।
- ভাল কাজের প্রশংসা করুন
- টয়লেট ট্রেনিং যদি শুরু না করেন তাহলে এখন থেকেই শুরু করুন।
বিপদ চিহ্ন:
- সমবয়সী অন্য শিশুদের সাথে না খেলা
- চোখে চোখ না রাখা
- সিঁড়ি বেয়ে না উঠতে পারা
- একটি বাক্যে তিন শব্দের বেশি বলতে না পারা।
- বাক্য শেষ করতে না পারা।
- আগে যা পারত তা না পারা ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মতামত আমাদের কাছে অনেক মুল্যবান,তাই মুল্যবান মতামত আমাদের কে জানান